বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অপরাধীর প্রতি কোনো অনুকম্পা নয়

কক্সবাজার ভয়েস ডট কম

শাহীন হাসনাত:

সামগ্রিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে নারীরা কতটুকু নিরাপদ? মেয়ে তার বাবা, বোন তার ভাই কিংবা স্ত্রী তার স্বামীর হাত ধরে বাইরে বেড়াতে যাবেন, এটা স্বাভাবিক বিষয়। বাবা তার মেয়েকে, ভাই তার বোনকে, স্বামী তার স্ত্রীকে সর্বোচ্চ নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবার কাছ থেকে মেয়েকে, ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে কিংবা স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে নৈতিকতাহীন কিছু অমানুষ পৈশাচিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়। একের পর এক এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে। ঘটনার ববর্রতায় রীতিমতো হতবাক দেশের মানুষ, কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গণমাধ্যমে আসছে নতুন আরেক ঘটনা। সৃষ্ট ঘটনায় অপরাধের ধরন, মাত্রা, ভয়াবহতা, অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতায় বিবেকবান মানুষ হতবাক, হতবিহ্বল। রাত-বিরাতে নয় শুধু, দিন-দুপুরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নিজ ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শুধু ধর্ষণ নয়, রীতিমতো দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় ধর্ষণের ঘটনা ধর্ষক কিংবা তার সহযোগী মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় ধর্ষণ কিংবা টাকা দাবি করে। সভ্য সমাজে এমন অসভ্যদের বিচরণ দিন দিন বাড়ছে, এ অবস্থা চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। মানবতার ধর্ম ইসলামও নারীর মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা এবং শিক্ষার কথা বলে। আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকার সমান ও অভিন্ন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পালাবদলে নারী অপরিহার্য অংশীদার। এমন বাস্তবতায় নারী নির্যাতনের এই চিত্র কোনোভাবেই কাম্য নয়। নারীর মর্যাদাহানি করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি সব সমাজেই কমবেশি আছে। কিন্তু এই সময়ে এটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নানাজন নানামত ব্যক্ত করেন। তন্মধ্যে মোটাদাগে যেসব কারণ চিহ্নিত করা যায় এগুলোর অন্যতম হলো সংশ্লিষ্ট অপরাধীর রাজনৈতিক ছত্রছায়া গ্রহণ, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ না থাকা, দায়িত্বপালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্য, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মাদক ও পর্নোগ্রাফির প্রভাব, ধর্মচর্চা থেকে দূরে থাকা, নৈতিক শিক্ষার অভাব ও পারিবারিক মূল্যবোধহীনতা। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠার পাশাপাশি মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসতে শুরু করেছে। জনগণের এই ক্ষোভ এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, নারীদের সম্ভ্রমহানির আশঙ্কার এই আর্তি সরকার এবং প্রশাসনকে বুঝতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাছবিচারের কোনো সুযোগ নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। আইনের শাসন, নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা এবং অপরাজনীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য হতে পারে না, অপরাধীদের প্রতি কোনো অনুকম্পা নয়। আমরা মনে করি, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে নৈতিকতার চর্চা বাড়ানো ও মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সৎ, আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষে সমাজ পরিপূর্ণ করে তুলতে পারলেই জাতির প্রকৃত উন্নতি ঘটবে, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে মসজিদের ইমাম-খতিবদের একযোগে মসজিদে-মসজিদে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুক্রবারে জুমার খুতবার আগে আলোচনা বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পরিবার প্রধানকেও সচেতন হতে হবে। তার সন্তান কার সঙ্গে মেশে সেটা খেয়াল করতে হবে। অসৎ সঙ্গ থাকলে তা ছাড়াতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা ও ধর্ষণমুক্ত সমাজ তৈরি করা আমাদের সবার চাওয়া।

কথা স্পষ্ট, ধর্ষক ধর্ষকই। ধর্ষক সন্তানকে মা-বাবা, ধর্ষক বাবাকে সন্তান, ধর্ষক ভাইকে অন্য ভাই-বোন, ধর্ষক আত্মীয়কে অন্য আত্মীয়দের বর্জন করতে হবে। বন্ধুত্বের টানে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা এবং আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বহিষ্কার করবে, চাকরিতে থাকলে সেখান থেকে বরখাস্ত করতে হবে। এক কথায়, সর্বাত্মকভাবে তাদের বর্জন করতে হবে। অপরাধীদের এটা বুঝিয়ে দেওয়া, তার অপরাধ সীমাহীন, ক্ষমার অযোগ্য; শাস্তি তাকে পেতেই হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের হীন কাজ করার সাহস না দেখায়।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION